আসল চিনি

কাজ শেষ করেই মা তুবার জন্য চকলেট নিয়ে বাসায় ফিরবেন। সে আশাতেই চার বছরের ছোট্ট মেয়ে তুবা মায়ের জন্য অপেক্ষা করছে। গত এক বছরেও মায়ের জন্য তুবার সে অপেক্ষা যেন শেষ হচ্ছেনা। মায়ের কথা মনে পড়লেই সে কেঁদে কেঁদে ভাই মাহিরের কাছে, কখনও খালার কাছে প্রশ্ন করে, “মা কখন ফিরবে”? মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ঘুম ঘুম চোখে তুবা তার ছোট হাত দিয়ে একটা পরিচিত শরীর খুঁজে। তুবা আবার কাঁদতে থাকে।

২০১৯ সালের ২০ জুলাই। ঢাকার উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল ৮ টা। তসলিমা বেগম রেণু তার ৪ বছর বয়সী মেয়ে তুবাকে এ স্কুলে ভর্তি করতে চান। সে খোঁজ নিতেই তিনি স্কুলে এসেছেন। মেয়ের ভর্তির খোঁজ আর নেয়া হয়না তার। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে রেণুকে হত্যা করা হয়। প্রকাশ্যে, দিবালোকে।

পদ্মা সেতুর জন্য মানুষের মাথা লাগবে, সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া এমন গুজবের কারণেই প্রাণ দিতে হয় রেণুকে। তুবা আর মাহির আর কোনদিন তাদের মাকে মা বলে ডাকতে পারবেনা, মায়ের কোলে ঘুমাতে পারবেনা। একটা মিথ্যা তথ্যের ফল কত নির্মম আর কত নিষ্ঠুর হতে পারে আমরা কি কখনও তা ভেবে দেখেছি?

শুধু ছেলেধরা গুজব নয়, ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে এমন অসংখ্য গুজবের কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে আমাদের জীবন। অথচ সামান্য বিবেকবুদ্ধি দিয়েই কিন্তু আমরা মিথ্যা তথ্য, গুজব চিনতে পারি এবং বন্ধ করতে পারি। গুজব নামের মহামারির হাত থেকে প্রিয় দেশকে বাঁচানোর দায়িত্ব আমার, আপনার, আমাদের সকলের।

তাই চলুন, একজন সচেতন ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে “আসল চিনি” ক্যাম্পেইনের সাথে যুক্ত হয়ে আমরা মিথ্যা, গুজব ও ভিত্তিহীন তথ্য চিহ্নিত করি। নিজে সচেতন হই। অন্যকেও সচেতন করি।